স্বৈরাচারের ডায়রি

লুটপাটের মাস্টারমাইন্ড সজীব ওয়াজেদ জয়

August 11, 2024

পরিচয়

শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় দেশের প্রযুক্তি খাত লুটপাট এবং অন্যান্য ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট থেকে কমিশন নেয়াই ছিল তার প্রধান কাজ। ব্যাংক লুটের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জয়।

আইটি খাত ধ্বংসের নায়ক

দেশের আইটি খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ সামিট ও বেক্সিমকো গ্রুপ। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সামিট ও বেক্সিমকো গ্রুপ এ সুযোগ পায়। নীতিমালা লঙ্ঘন করে সামিটকে দেওয়া হয়েছিল ৬টি লাইসেন্স, যা ছিল বাজার প্রতিযোগিতার পরিপন্থী। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের ৫০ শতাংশের বেশি এখন সামিটের দখলে। সামিট গ্রুপ ইন্টারনেট সঞ্চালনের প্রায় সব স্তরে আধিপত্য বিস্তার করে, আর ভয়েস কল খাতে বেক্সিমকোর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে প্রতাপের সঙ্গে ব্যবসা করে দেশের প্রথম শত হাজার কোটি টাকার মালিকও হয়েছেন এই সামিট গ্রুপের মালিক মোহাম্মাদ আজিজ খান। শুধু তাই নয়, সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় রয়েছে তার নাম।
[পত্রিকা কাটিং-]
যেভাবে আইসিটি খাত ধ্বংস করেন জয় ও পলক
শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সখ্য ছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। সেই প্রভাব খাটিয়ে সরকারের আইসিটি বিভাগ একক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তিনি। যেকোনো প্রকল্প থেকে মোটা অংকের কমিশন যেতো পলকের পকেটে। বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এসপায়ার টু ইনোভেটেড (এ টু আই) প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইটেক পার্ক, আইটি পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনসহ একাধিক প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয় শেখ হাসিনা সরকারের আমলে। দুইবারের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পলক। আইসিটি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে একাই বাগিয়ে নিতেন ১৫ শতাংশ কমিশন।
[পত্রিকা কাটিং-]

ব্যাংক লুটের মাস্টারমাইন্ড জয়

দেশের সরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো লুটের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিলেন শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান, বিতর্কিত শিল্প গ্রুপগুলোর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল, বাণিজ্যিক ব্যাংকের বড় অংকের ঋণ অনুমোদনের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতেন তিনি। এসব কাজে কখনো সরাসরি গভর্নরকে ফোন করতেন জয়। আবার কখনো ডেপুটি গভর্নর কিংবা নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের কাছেও জয়ের ফোন আসত। নিজে সরাসরি ফোন করা ছাড়াও কখনো কখনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মাধ্যমেও হস্তক্ষেপ করতেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
[পত্রিকা কাটিং-]
জয় ঘনিষ্ঠদের লুটপাট
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ শাসনামলে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে নিজেদের ইচ্ছামতো লুটপাট করেছে। এসব লুটপাটের একটা অংশ নিজের হাতে রাখতেন জয়। হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পি কে হালদার, গোপালগঞ্জের নাফিস সরাফাত, সালমান এফ রহমান, এই নামগুলো ব্যাংক লুটের একেকটি আখ্যান। ভুয়া কাগজ দেখিয়েও হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো শুধুমাত্র জনতা ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১৪২৪ কোটি টাকা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ এই ১৫ বছরে ২৪টি বড় বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা হয়ে গেছে। অথচ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সহযোগীদের ১ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার বা ২ লাখ কোটি টাকা লুটের যে কথা বলেছেন, তার সবই খেলাপিযোগ্য। ফলে সামনে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রাখতে ও কাগজে-কলমে কমিয়ে দেখাতে নানা কৌশল অবলম্বন করত।
[পত্রিকা কাটিং-]
যেভাবে ইসলামী ব্যাংক লুট করে জয়-রেহানা ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) হস্তক্ষেপে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও এমডিকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করিয়ে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ। এরপর ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিজেদের অনুগতদের নিয়োগ দেয় তারা। ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে ও স্বার্থসংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লুট করে এস আলম গ্রুপ। এছাড়া এস আলমের জামাতা বেলাল আহমেদের ইউনিটেক্স ৪৫৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়। ইউনিটেক্স জনতা ব্যাংক থেকেও ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের ‘বৈষম্যবিরোধী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষাকারী ব্যাংকার সমাজের’ সমন্বয়ক আবু ওয়ালিদ চৌধুরী সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এক পর্যায়ে ব্যাংকের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যায়। এছাড়া আরও চার ব্যাংক থেকে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও অধিক লুট করেছে এস আলম গ্রুপ। এই টাকার অর্ধেকেরও বেশি ভাগ পেয়েছেন হাসিনাপুত্র জয় ও বোন শেখ রেহানা।
[পত্রিকা কাটিং-]

উন্নয়নের নামে হরিলুট

বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বড় বড় প্রজেক্ট বের করে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে লুটপাট চালিয়ে যেত শেখ পরিবার। রিমান্ডে সালমান এফ রহমান জানিয়েছেন, নতুন নতুন প্রকল্প বের করার তাগাদা দিতেন শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা। নতুন প্রকল্প মানেই বড় অঙ্কের কমিশন। এর সবকিছুই জানতেন শেখ হাসিনা।
[পত্রিকা কাটিং-]

অর্থ পাচার

শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ ও টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। পাচারের অর্ধেক টাকা শেখ রেহানা ও হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
[পত্রিকা কাটিং-]