চেতনায় অন্ধজাতি
July 26, 2024
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলে কী?
পাকিস্তান ১৯৪৭ সাল থেকেই বাংলাদেশকে শোষণ করে আসছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ হয় ১৯৭১ সালে। দেখা যাক মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল
এবং তা আমাদের কী কী চেতনার শিক্ষা দেয়।
মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল মূলত দুটি কারনে:
- পাকিস্তানের শোষণ থেকে দেশকে মুক্ত করা অর্থাৎ তৎকালীন সরকারের শোষণ হতে জনগণের মুক্তি
- চেতনা শিক্ষা: সরকারী শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া
- জনগণের ভোটে গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দল (আওয়ামী লীগ) কে সরকার গঠন করতে দেয়া
- চেতনা শিক্ষা: রক্ত দিয়ে হলেও গনতন্ত্র সমুন্নত রাখা
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ও সমর্থণের আরো কিছু কারন হচ্ছে:
- এটা অধিকার আদায়ের ন্যায় যুদ্ধ ছিল
- চেতনা শিক্ষা: ন্যায্য অধিকার আদায়ে পিছপা না হওয়া
- রাতের অন্ধকারে জনগন ও বুদ্ধিজীবিদের নির্বিচারে হত্যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়
- চেতনা শিক্ষা: সরকারী শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া
- দেশের কিছু মানুষের (রাজাকার) হানাদার বাহিনীর সাথে মিলে নিজ দেশের মানুষকে খুন ও ধর্ষণের উপযুক্ত জবাব দেয়া
- চেতনা শিক্ষা: যারা সরকারকে অপরাধ/খুন/গুম/হয়রানী করতে সাহায্য করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো
অবশ্যই আরো অনেক কারন আছে তবে আপাতত এগুলো পরীক্ষা করা যাক।
চেতনা পরীক্ষা
দেখা যাক আওয়ামীলীগ আসলে কতটুকু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহন করে
মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনা | আওয়ামীলীগের বর্তমান কার্যকলাপ |
---|---|
সরকারী শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া | আওয়ামীলীগ নিজেই এখন শোষণে ব্যস্ত। ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ ও ছাত্রলীগ দিয়ে যাকে ইচ্ছা তাকে নির্যাতন করেছে। সরকারে আসার পর থেকে আওয়ামীগ শুধু হয়রানিই করেনি বরং আইন করে বিচারহীনভাবে হাজার হাজার মানুষকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। র্যাব-পুলিশ দিয়ে খুন-গুম করা হয়েছে। ICT আইন করে শুধুমাত্র ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারনে শতশত মানুষকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। হাসিনার ব্যঙ্গ ছবির কারনে স্কুল পড়ুয়াকে জেলে নেয়া হয়েছে। জুম মিটিং সঞ্চালণ করার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরাকে মাসের পর মাস জেল খাটানো হয়েছে। এগুলো ৩০ লাখ মানুষের রক্তে আনা স্বাধীন দেশে কিভাবে মেনে নিচ্ছেন? জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কোথায়? আওয়ামীলীগ যদি স্বাধীনতার চেতনাবাহক হতো তাহলে তারা এই অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করতো। কিন্তু তারাই বরং এই অধিকার হরণ করার চালিকা শক্তি হয়েছে। |
গনতন্ত্র সমুন্নত রাখা | আওয়ামীলীগ ২০১৮, ২০১৯, ২০২৪ সালে পরপর তিনটি নির্বাচনে কারচুপি ও একছত্র ভোটবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গনতন্ত্রকে উলঙ্গ করেছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত দিয়ে গনতন্ত্র ফিরিয়ে এনে হাসিনার বাবাকে প্রধানমন্ত্রীত্ব করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। এখন তারই কণ্যার গনতন্ত্র ধ্বংস করা মুক্তিযুদ্ধের শহীদগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের জনগনের সাথে বেঈমানী ছাড়া আর কিছুই না। |
ন্যায্য অধিকার আদায়ে পিছপা না হওয়া | ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামীলীগ ন্যায্য অধিকার আদায়ে কোন সাহায্য তো করেই নি বরং জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সকল চেষ্টাকে কঠোরভাবে দমন করেছে। এর উদাহরণ হচ্ছে ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন, ২০১৮ সালের নিরাপদ আন্দোলন সহ হাজার হাজার ঘটনা। ২০২৪ এর কোটা আন্দোলনে হাসিনা সরকার কমপক্ষে ১৭০ জনকে খুন করেছে যার অধিকাংশই ছাত্র। |
দেশের যারা সরকারের অপরাধ/খুন/গুম/হয়রানী করতে সাহায্য করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো | বাংলাদেশী কেউ যদি নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারের সাথে যোগ দিয়ে শোষণ/খুন/গুম/অত্যাচার/হয়রানী করে তবে গনতন্ত্রের চেতনাবাহক তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে এবং জনগনের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবে আওয়ামীগ নিজেই এই শোষণ/খুন/গুম/অত্যাচার/হয়রানী করছে। ছাত্রলীগ ও পুলিশ আজ একটি ঘৃণ্য গোষ্ঠীতে পরিনত হয়েছে যারা আজ সরকারের শোষণের হাত হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। |
আওয়ামীলীগ ও চেতনার মধ্যে বর্তমান সম্পর্ক
উপরের তুলনা থেকে এটাই স্পষ্ট নয় যে, আওয়ামীগ চেতনা বহন তো করেই নি, বরং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে চেতনার বিরুদ্ধে গিয়েছে?
সেটাই যদি হয়, তাহলে যারা এই সরকার ও আওয়ামীলীগ এর শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে, আন্দোলন করছে তারাই বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আসল বাহক নয় কি?
হাসিনার সাত খুন মাফ
এত শোষণ/নির্যাতন/দুর্নীতির পরও শুধুমাত্র তার বাবা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন বলে তার সকল অপরাধ মাফ হয়ে যাবে?
কী কী করলে আপনি মেনে নেবেন যে হাসিনা যথেষ্ট অপরাধ করেছে এবং শুধুমাত্র চেতনা বা উন্নয়নের দোহাই দিয়ে তাকে স্বৈরাচারী করতে দেয়া যায় না?
- পুরো সংবাদ ও টিভি মিডিয়াকে চাটুকারে পরিনত করা?
- শতশত মানুষকে গুম করা?
- সেনানিবাসের ভেতরে টর্চার সেল তৈরি?
- তার নিজ এসিস্টেন্ট ৪০০ কোটি টাকা লুটপাট করার সুযোগ পাওয়া?
- তার সময়ে পুলিশ বাহিনীর প্রধান হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা?
- তার সময়ে সেনাবাহিনীর প্রধানের দুর্নীতি ও নিজের খুনের সাজাপ্রাপ্ত ভাইকে মুক্ত করার সুযোগ করে দেয়া?
- দেশের ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করা?
- হাজার কোটি টাকার অসংখ্য ঋণখেলাপী হওয়ার সুযোগ করে দেয়া?
- আন্দোলন করায় ৪০+ ছাত্রসহ ২০০+ জনকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে মারতে বলা?
মুক্তিযুদ্ধ ও এর চেতনাকে কে, কিভাবে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে?
আমরা যখন ভোট দেই তখন আমাদের মূল চিন্তা থাকে কাকে ভোট দিলে ভাল কাজ করবে, দুর্নীতি করবে না। কিন্তু পলিটিক্যাল লিডারদের এটা সুবিধাজনক নয়, কারন
এতে দুই দলের তুলনা তৈরি হয় এবং এ তুলনায় এগিয়ে থাকতে থাকতে ভাল কাজ করতে হয়। যেহেতু তারা দুনীর্তিই করতে চায়, এজন্য সুবিধাজনক পদ্ধতি হচ্ছে একটি গোষ্ঠীকে জনগণের একাংশের
প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো। তখন ঐ একাংশ মনে করে এই নেতা তাদের আপনজন। এর কিছু উদাহরণ:
- মোদি: মোদি ভারতে মুসলমানদেরকে হিন্দুদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখায়। এতে কট্টর হিন্দুরা যারা আগে থেকেই মুসলমানদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে তারা মনে করে মোদি তাদের আপনজন, মোদির দলকে তারা ভোট দেয়।
- ট্রাম্প: ট্রাম্প অ্যামেরিকায় মেক্সিকানদেরকে শ্বেতাঙ্গদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখায়। অ্যামেরিকার বড় একটি অংশ ইতিমধ্যে মনে করে মেক্সিকানরা অ্যামেরিকাতে এসে খারাপ কাজ করে। এই অংশটি তখন ট্রাম্পকে সাপোর্ট দেয়। ট্রাম্প চারবছরে কোন কাজ করলো কিনা সেটা তার সমর্থকরা বিবেচনাতেই আনে না।
বাংলাদেশেও আওয়ামীলীগ সরকারের দুর্নীতি ও অপরাধ ঢাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। ছাত্রলীগের অর্ধশিক্ষিত-কুশিক্ষিত
অনুসারীরা এটাকে এতটাই অন্ধ ও বিকৃতভাবে বুঝে যে, হাসিনা যদি ওদের সামনে হাজার হাজার মানুষকে খুন করে তবুও তারা হাসিনাকেই পায়ে ছুঁয়ে সালাম করবে।
পরিশেষে দেখা যাক, মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে কী বলছেন